ব্যাখ্যাতীত কোনো কারণে হুমায়ূন আহমেদ মাকড়শা নামক নিরীহ প্রাণীটিকে অসম্ভব ভয় পেতেন। এক যাত্রাপথে তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো মাকড়শার ব্যাপারগুলো। সেখানেই এই উপন্যাসের পুরো গল্প মাথায় আসে তাঁর। গল্পের পাত্র-পাত্রী তিনজন। তারা মানুষ নয়, অসম্ভব বুদ্ধিমান তিনটি প্রাণী- দেখতে মাকড়শার মতো। উপন্যাসে তাদের নাম লী, অয়ু ও নীম।
শুভ্র প্রথমে তার ভাগনের চোখে ‘হিমু মামা’ হয়ে উঠতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছেও সে অদ্ভূত আচরনের যুবক ‘হিমু’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু সে নিজে মনে করে সে পুরোপুরি হিমু হয়ে উঠতে পারেনি, এ জন্য অধ্যবসায় প্রয়োজন। শুভ্রকে হিমু হয়ে উঠতেই হবে কেন? লজিক কী! হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্য উপন্যাস 'হিমু মামা'। প্রিয় পাঠক, আপনি প্রবেশ করছেন হিমুর পাগলামির জগতে, যেখানে আছে যুক্তি ও যুক্তি খণ্ডনের অন্যরকম এক খেলা।
হিমু ও তামান্নার বিয়ের কার্ড দেখতে সুন্দর হলেও রূপা হাসলো। এমনিতে সে খুব কম হাসে। ছোটবেলায় কেউ বোধহয় তাকে বলেছিলো কম হাসতে। তাকে বিষণ্ণ অবস্থায় দেখতে ভালো লাগে। ব্যাপারটা তার মাথায় ঢুকে গেছে, সে জন্যেই সারাক্ষণ বিষণ্ণ থাকে। এই নিয়ে সে হাসলো চারবার, পঞ্চমবার হাসলেই ম্যাজিক নাম্বার পূর্ণ হবে। ‘হাসছ কেন রূপা?’ -তুমি বদলে যাচ্ছ এই জন্যে হাসছি। মানুষকে আগে তুমি ধোঁকা দিতেনা, এখন দিচ্ছ। ‘কাকে ধোঁকা দিচ্ছি?’ -তামান্না নামের মেয়েটাকে দিচ্ছ। বিয়ের রাতে সবাই উপস্থিত হবে শুধু তুমি হবে না। তুমি জ্যোৎস্না দেখতে জংগলে চলে যাবে। মেয়েটার কি হবে ভেবেছ কখনো?
হুমায়ূন আহমেদের অমর সৃষ্টি মিসির আলী, এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তার সাথে দেখা করতে আসেন ওসমান গণি নামের একজন লোক, যার তিনটি দাঁত সোনা দিয়ে বাঁধানো। কিছু কথাবার্তার পর ওসমান গণি এক অদ্ভুত আবদার করেন মিসির আলীর কাছে। এর পরের দিন মিসির আলীর বাসায় পুলিশ আসে। কেননা ওসমান গণি মারা গেছেন। এটা কি আত্মহত্যা? নাকি খুন? রহস্য উদ্ধারে মাঠে নামেন মিসির আলী!
সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে একদল তরুন। উপন্যাস শুরুর একটু পরেই গল্পের মোড় ঘুরে যায়। পারিবারিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা, ব্যক্তিগত সমস্যা, সীমাবদ্ধতা ঘিরে আছে একেকটি চরিত্রকে। একসাথে পড়াশোনা করলেও কতো পার্থক্য তাদের মাঝে! কেউ ধনী, কেউ একটা শার্ট পরে শীত কাটিয়ে ফেলে! সেন্টমার্টিন যাবার জন্য টাকা যোগাড় করতে কেউ হিমশিম খায় কিন্তু আশা ছাড়ে না। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের বহুল পঠিত উপন্যাস ‘দারুচিনি দ্বীপ’। জীবন ও সমুত্রের বিচিত্রিতা বুঝবে, এমন মানুষ কই!
অনিল বাগচী অবিবাহিত, মোটামুটি সুপুরুষ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি-তার ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। রোজ ভোরবেলা কয়েকটা কাক তার জানালার পাশে খুব হল্লা করে। কার সাধ্য ঘুমিয়ে থাকার? শ্রাবণ মাসের এক সকালে কাকের ডাকে তার ঘুম ভাঙল। সে জানালা খুলে বাইরে তাকাল। কেন জানি জানালার ও-পাশের পৃথিবীটাকে তার হঠাৎ করেই অপূর্ব সুন্দর মনে হল। যদিও সেদিনের মেঘলা সকাল আর দশটা সাধারণ সকালের মতোই ছিল। তবু অনিল বাগচীর মনে হল-কী অপূর্ব একটা সকাল! সে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ভাবল, আজকের দিনটি অন্য রকম করে শুরু করলে কেমন হয়? কিন্তু অনিল বাগচীর একদিন মিলিটারীর মুখোমুখি হতে হয়!
একসময় স্পঞ্জের স্যন্ডেলের ফিতা আলাদা কিনতে পাওয়া যেত। ফিতা ছিঁড়ে গেলে নতুন ফিতা কিনে লাগানো যেতো।এখন এই কাজ কেউ করে না। ফিতা ছিঁড়ে গেলে স্যান্ডেল ফেলে দিয়ে নতুন স্যান্ডেল কেনে। ওয়ানটাইম ইউজ। আমরা দ্রুত ওয়ানটাইমের দিকে এগুচ্ছি। এই অভ্যাস কি আমরা প্রকৃতির কাছে পেয়েছি? প্রকৃতিও এ রকমই করে।
স্ত্রী রুপার প্রতি মুগ্ধ রঞ্জু। বাবার চোখে ক্রমশঃ ব্যক্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে সে। মা একদিন বললেন, 'তুই খারাপ ধরনের ছেলে'। রঞ্জুর চোখে তার মা একজন খারাপ ধরনের মা, স্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ, শিক্ষিকা হিসেবেও ব্যর্থ। বোন মুনিয়ার সঙ্গে রঞ্জুর বনিবনা আপাতদৃষ্টিতে 'ভালো'। এদিকে রুপাকে নিয়েও অসন্তোষ আছে রঞ্জুর মা-বাবার মনে, বিশেষ করে মুখের ওপর ফটফট করে কথা বলা রুপাকে অসহ্য লাগে তাদের কাছে! অন্যদিকে রঞ্জুকে দেখা যায় একটি খুনের পরিকল্পনা করছে। কে খুন হতে যাচ্ছে রঞ্জুর হাতে? হুমায়ূন আহমেদের চমক ও রহস্যের সঙ্গে পরিচিত পাঠকগণ এই গল্পেও পাবেন তুঙ্গস্পর্শী এক পাঠ-অনুভূতি।
লেখক জানাচ্ছেন, “সম্রাট'-এ ড্যানিয়েল কার্নের লেখা ‘ওয়াইল্ড গীজ’ বইটির ছায়া আছে। যদিও ঘটনা ও চরিত্র বিন্যাস সম্পূর্ণই আমার। অন্য গল্পের ছায়ায় নতুন গল্প লেখার এই প্রবণতার মানে কি? আমি জবাব দিতে পারব না। কিছু কিছু গল্প নানা কারণে ভাল লেগে যায়। ইচ্ছে করে সেই আদলে আমার মতো করে কিছু লিখি।”
নকল বাবা-মার কাছে বেড়ে উঠছে রনি। এতে তার খুব বেশি খারাপ লাগা নেই। আসল মা-বাবা মারা যাওয়ার পর নকলদের কাছে বড় হচ্ছে সে, এও কী কম পাওনা! তারপরও অল্প খারাপ লাগা আছে। এক গাদা শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া, নাস্তার টেবিলে অভিভাবকদের কঠিন কথা শোনা- এগুলো ওর কাছে বিরক্তিকর। ভাগ্যক্রমে রনির নামে বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও টাকার পরিমান অনেক বেশি। অনেক মানে, ‘বেশুমার’ লেভেলের বেশি।
বঙ্গবন্ধু হত্যা রহস্যসহ ‘দেয়াল’ উপন্যাসে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ তথা এদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। বর্ণিত হয়েছে কর্নেল তাহের ও মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফের অবদান। খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতালাভ ও কারাগারে চার নেতা হত্যার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অবন্তি নামে এক প্রথাবিরোধী মেয়ের গল্পও এসেছে গুরুত্বের সাথে। যে ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নিরাপত্তার খোঁজে গ্রামে চলে যাওয়া অসহায় মেয়েদের একজন।
ছেলেবেলার সেই শঙ্খনদীর তীর, বাবার অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব আর তাঁর সাথে কাটানো অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্তের স্মৃতিতে পথরোধ করে থাকা একাত্তরের হানাদার পাকবাহিনী, মা-এর কাছে বড় হওয়া, দাদাবাড়ি-নানাবাড়ি আর শৈশবের বিভিন্ন চিত্র ও চরিত্রকে নিজ নিজ রঙে অপূর্বভাবে চিত্রায়ন করেছেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর “আমার ছেলেবেলা” গ্রন্থে।
মনসুর সাহেব শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময়ে অঙ্ক কষতে ভারী পছন্দ করেন। এগারো বছর ধরে তার পৃথিবী থেমে আছে এক বিশেষ অঙ্ক নিয়ে। মানুষের সঙ্গের চেয়ে তাকে বেশি আকৃষ্ট করে মৌলিক সংখ্যা কিংবা ফিবোনাক্কির সিরিজ। একদিন ঘোর বৃষ্টির মধ্যে তার সঙ্গে দেখা হয় এক তরুণের। সে মজা করে বলে তার নাম হলো ফিবোনাক্কি। এরপর মনসুর সাহেবের সাথে ঘটতে থাকে বিভিন্ন অদ্ভুত ঘটনা।
নিজের জীবনের কিছু কথা তিনি বলেছিলেন ‘বলপয়েন্ট’ নামে একটা বইয়ে। এ ধারাবাহিকতার আরেক বই 'কাঠপেন্সিল'। যথারীতি হুমায়ূন আহমেদ এখানে নিজেকেই হাজির করেছেন গল্পকথাচ্ছলে! বইটির শুরুতে ভূমিকায় হুমায়ূন বলছেন, "আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, বিয়েবাড়ি, জন্মদিন খতনা উৎসব, সব বাতিল। গর্তে বসে লেখালেখি করি, ছবি দেখি, ছবি আঁকি, গান শুনি। এতে আমার একটা লাভ হয়েছে, মনের কিছু বন্ধ জানালা খুলে গেছে। যে চার দেয়ালে আটকা পড়ে যায়, তাকে প্রকৃতি মুক্তি দেবার চেষ্টা চালায়। তার মনের বন্ধ দরজা-জানালা খুলে এক বিশেষ ধরনের মুক্তির ব্যবস্থা করে। 'কাঠপেন্সিল'-এর লেখাগুলি সেই বিশেষ মুক্তির ফসল।" জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের যে কোনো লেখার মতো এটিও বেশ রসসিক্ত, আগ্রহোদ্দীপক। তাঁর কল্পনার গল্প নয়, তাঁর জীবনের গল্প থাকছে 'কাঠপেন্সিল'-এ। বরাবরের মতো এটিও হুমায়ূন আহমেদের সেরা সৃষ্টির একটি।
নিলু-বিলু জমজ বোন। আরেক বোন সেতারার জন্মের পর ওদের মা অন্য পুরুষের সাথে পালিয়ে যায়। এরপর বাবার একক ভালবাসায় তারা ৩ বোন বেড়ে উঠতে থাকে। এখানে আছে বাবার ভালোবাসায় পরিচালিত এক পরিবারের গল্প, এসেছে যমজ বোনের ভালোলাগা-ভালোবাসার চিত্র। একসময় ওরা খুঁজে পায় তাদের ভালোবাসার মানুষকে। এর মধ্যেই ঘটে আরও কিছু ঘটনা। ‘তোমাকে’ জীবনের এক মিশ্র অনুভূতির উপন্যাস। সহজাত ভাষার কারণে এটি উঠে এসেছে হুমায়ূন আহমেদের সেরা বইয়ের তালিকায়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘১৯৭১’। মুক্তিযুদ্ধের সময় নীলগঞ্জ নামে একটি গ্রামে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে উপজীব্য করে এটি রচিত। বাংলাদেশের হাজারো গ্রামের প্রতিনিধিত্ব করছে নীলগঞ্জ। তিনি এই গ্রামের পটভূমিতে একাত্তরের কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন এক ভাবনার উদ্রেক করে এই উপন্যাস।
হুমায়ূন আহমেদের ‘আমিই মিসির আলী’ উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে চরিত্রটির নিত্য দিনের ঘটনা। মিসির আলী নিজেই রান্না করে খুব তৃপ্তি সহকারে খান, গান শোনেন। একদিন তার ক্যাসেট প্লেয়ারটা চুরি হয়ে যায়। তাই এখন তিনি প্রায়ই কল্পনায় গান শোনার চেষ্টা করেন। পাঠক মাত্রই জানেন, মিসির আলী এক অদ্ভূত চরিত্র। কিন্তু ঠিক কতোটা অদ্ভূত?
হুমায়ূন আহমেদের বহুল পঠিত উপন্যাস ‘দারুচিনি দ্বীপ’ এর কাহিনি যেখানে শেষ, ‘রূপালী দ্বীপ’ এর যাত্রা সেখান থেকেই। তরুণ দলটি অবশেষে তাদের অতিকাঙ্খিত দারুচিনি দ্বীপ তথা সেন্টমার্টিনে পৌঁছায়। এর আগেই নানা কারণে শেষ মুহূর্তে অনেকেই বাদ পড়ে সেই দল থেকে! ওরা যখন নৌকায় তীব্র স্রোতের বিরুদ্ধে এগিয়ে যায় কিংবা জীবনের অমোঘ সত্যের মুখোমুখি হয়, পাঠক যেন নিজেও ওদেরই একজন সঙ্গী হয়ে ওঠে! ‘দারুচিনি দ্বীপ’ এর দ্বিতীয় খন্ড ‘রূপালী দ্বীপ’ও পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
Items Showing 1 to 20 from 20 books results