লেখক জানাচ্ছেন, “সম্রাট'-এ ড্যানিয়েল কার্নের লেখা ‘ওয়াইল্ড গীজ’ বইটির ছায়া আছে। যদিও ঘটনা ও চরিত্র বিন্যাস সম্পূর্ণই আমার। অন্য গল্পের ছায়ায় নতুন গল্প লেখার এই প্রবণতার মানে কি? আমি জবাব দিতে পারব না। কিছু কিছু গল্প নানা কারণে ভাল লেগে যায়। ইচ্ছে করে সেই আদলে আমার মতো করে কিছু লিখি।”
'মা' বাস্তব ঘটনাভিত্তিক উপন্যাস। লেখক এই কাহিনীর সন্ধান পান মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর কাছ থেকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আজাদ ও তাঁর মায়ের জীবনের সত্য ঘটনা নিয়ে রচিত এই উপন্যাসটির আবেদন মর্মস্পর্শী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসগুলোর মধ্যে এর স্থান অন্যতম। আনিসুল হকের বহুল আলোচিত রচনা এটি।
উত্তরবঙ্গের মঙ্গাপীড়িত জনগোষ্টীর প্রতিনিধি আবুল হোসেন ও সোনাবানু। ‘ক্ষুধা এবং ভালোবাসার গল্প’ উপন্যাসের এই প্রধান দুই চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক আনিসুল হক ক্ষুধা পীড়িত মানুষের প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন। এর মধ্যে ত্যাগ , ভালোবাসা ও জীবনবোধের কঠিন পরীক্ষা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ তার নিজের কাছে, ভালোবাসার কাছেও কতো অসহায়, কে জানতো!
স্বপ্ন আর বাস্তবের বিভ্রমে পড়ে খুন হয় সুবর্ণা। অচিনের উদ্দেশে স্টিমারে ওঠে মুনতাসির। ঘোর-লাগা চন্দ্ররাত্রিতে সমুদ্রের ঘাই খেয়ে ঝলসে উঠা ঢেউ দেখতে দেখতে ঘাড়ে পূর্বাশার নিঃশ্বাসের গন্ধ অনুভব করে। অপরূপা পূর্বাশার সঙ্গে নানা কথোপথনের দীর্ঘ যাত্রা চলতে থাকে। সুবর্ণার পিঠাপিঠি পালিত ভাই অপুর প্রতি সুবর্ণার বাড়াবাড়ি প্রগাঢ় মায়া ভালোবাসাকে সবাই সন্দেহের চোখে দেখে। মুনতাসিরের হাতে অস্ত্র ওঠে সেই কারণেই। এইসব দিক চক্রে মুনতাসির যেখানে পৌঁছায় সেখানেও তার দেখা হয় আরেক অথবা একই সুবর্ণার সঙ্গে। সুররিয়ালিস্টিক এই উপন্যাসটি কখনো সত্যের মতো মিথ্যা, কখনো মিথ্যার মতো সত্যে আক্রান্ত।
বাসায় ঢুকেই বুঝতে পারলাম গরুর মাংস রান্না হচ্ছে। কষানো মাংসের ঘ্রাণে বাড়িঘর ডুবে আছে। মনে হয় প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পর আজকে বাসায় ভালো-মন্দ কিছু রান্না হচ্ছে। করিডোর দিয়ে যেতে যেতে এক ঝলক রান্নাঘরের দিকে তাকালাম। কে রান্না করছে, আম্মা নাকি মামি? দেখলাম মামি কাঠের বড় চামচ দিয়ে কড়াইয়ে প্রবল বেগে মাংস নাড়ছেন। কড়াই থেকে ধোঁয়া উঠছে। আমার পেটের ভেতরে খিদে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করে দিলো। লম্বা পা ফেলে আম্মার ঘরের দিকে চলে গেলাম। আম্মা খাটে বসে কিবলামুখি হয়ে তসবি গুনছেন। আমি বাথরুমের দরজা যথাসম্ভব আস্তে খোলার চেষ্টা করলাম। আম্মা তাও টের পেয়ে গেলেন। ‘মনু নাকি! কখন আইছিস?’ ‘এই তো।’ ‘এই তো’ বলে আমি বাথরুমে ঢুকে গেলাম। আম্মার সঙ্গে কথা বাড়াতে চাই না। কী লাভ কথা বলে? কী বলব আমি?
বঙ্গবন্ধু হত্যা রহস্যসহ ‘দেয়াল’ উপন্যাসে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ তথা এদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। বর্ণিত হয়েছে কর্নেল তাহের ও মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফের অবদান। খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতালাভ ও কারাগারে চার নেতা হত্যার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অবন্তি নামে এক প্রথাবিরোধী মেয়ের গল্পও এসেছে গুরুত্বের সাথে। যে ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নিরাপত্তার খোঁজে গ্রামে চলে যাওয়া অসহায় মেয়েদের একজন।
রাবেয়া খাতুনের রচনায় মহান মুক্তিযুদ্ধ, মানুষের মনের কথা, নির্লিপ্ততা, শিল্পের জন্য শিল্প, সাহিত্যের গভীরতা, নারী জাগরণ ও আবহমান বাংলা জীবনের ছবির সঙ্গে নৈসর্গ চেতনা মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে। তিনি তাঁর ‘একাত্তরের নয় মাস’ গ্রন্থে লিখেছেন শ্বাসরূদ্ধকর দিনগুলোর কথা। প্রত্যেক মুহূর্তের শঙ্কা, ভয়, হানাদার বাহিনীর বর্বরতা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। নিজের চোখে দেখা নয় মাস তিনি তুলে ধরেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের সামনে।
নূরজাহানের বিয়ের পর স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এদিকে প্রভাবশালী মাওলানার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় তাকে সামাজিক চাপ সহ্য করতে হয়। মধ্যবয়সী এই মাওলানা ক্ষিপ্ত হয়ে ফতোয়া জারি করে নূরজাহানের দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ নয় বলে। কাহিনিতে উঠে এসেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, রাজনীতি, তৎকালীন গ্রাম বাংলার চিত্র। ধর্মান্ধতা, নারী নির্যাতন এখনও তীব্রভাবে জেঁকে আছে বাংলার মানুষের মগজে।
কাহিনিতে উঠে এসেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, রাজনীতি, তৎকালীন গ্রাম বাংলার চিত্র। ধর্মান্ধতা, নারী নির্যাতন এখনও তীব্রভাবে জেঁকে আছে বাংলার মানুষের মগজে। নূরজাহান এমন এক সমাজের মানুষ, যেখানে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত নয়, যেখানে তাদের টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়।
কাহিনিতে উঠে এসেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, রাজনীতি, তৎকালীন গ্রাম বাংলার চিত্র। ধর্মান্ধতা, নারী নির্যাতন এখনও তীব্রভাবে জেঁকে আছে বাংলার মানুষের মগজে। নূরজাহান এমন এক সমাজের মানুষ, যেখানে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত নয়, যেখানে তাদের টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়।
‘এবং প্যারিস’ মূলত এক মলাটে দুটি বই। দুটিই ভ্রমণ কাহিনী। একটি ‘গিমে পর্ব’, অন্যটি ‘এবং প্যারিস’। গিমে জাদুঘরের ইতিহাস, তার জন্মকথা ও কর্মকান্ড এবং মিউজিয়ামের ধারণা কীভাবে মানবজাতির মধ্যে এসেছে, তার জন্ম-ইতিহাস সম্পর্কে একটি বিশদ ধারনা পাওয়া যাবে বইয়ের প্রথম অর্ধাংশজুড়ে। ফিলিপ স্টার্নের রবীন্দ্ৰদৰ্শন কোথায় ঘটেছিলো, বুলনে আলবার্ত কানের ওই বাগানবাড়িতে, নাকি গিমের রবীন্দ্র-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে? এ রকম পুরনো কিছু প্রশ্নের মীমাংসা করারও চেষ্ট করা হয়েছে প্রথম অংশে। ‘এবং প্যারিস’ অংশে কবিকন্যা মৃত্তিকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দু’জনের অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা। এই পর্বটির বিশাল অংশ জুড়ে আছে ফরাসি বিপ্লব ও কবিকে লেখা অনেকগুলো চিঠি এবং তার জবাব। বইটি ভ্রমণপিয়াসী, জ্ঞানপিপাসু পাঠকের প্যারিস-আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।
মাজহারুল ইসলামের গল্পের জগৎ পাঠকের চেনা। প্রথমে এমনই মনে হয়। ঘটনা, চরিত্র সবই যেন জানা। কিছু পরেই যদিও পাঠক স্পষ্ট বোঝেন না, অমন নয়, সবই গল্পকারের নিজ জীবন থেকে তুলে আনা। তিনি তাকে না-দেখালে কিছুই চোখে পড়ত না। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের সমস্ত শব্দ-বর্ণ-গন্ধ কি অতীন্দ্রিয় জীবনের নানা বোধও তাঁর চেতনার কুঠুরিতে সঞ্চিত হয়। লেখকই পারেন তার নির্যাসটুকু পাঠকের হাতে তুলে দিতে। সাতটি গল্পের এই সংকলন জীবন ও জগতের নানা কথা বলে। ব্যক্তিগত কি পারিবারিক দুঃখ-শোক-যন্ত্রণা অথবা রাজনৈতিক বৈকল্যের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধসঞ্জাত ক্রোধ ও বেদনার পরম আলেখ্য হয়ে দাঁড়ায়।
একেবারেই রাজনীতি সম্পৃক্ততা ছিলনা যাদের, হাটে-মাঠে-জনপথে লক্ষহীন গুলির শিকার হয়েছেন- স্বাধীনতা যুদ্ধের এমন শহীদদের তুচ্ছাতিতুচ্ছ প্রাপ্তির হিসাবেও অনেকে গড়মিল খোঁজেন। বলিদানের কি রকমফের হয়? প্রতিটি শহীদ পরিবারই এক মৃত্যুসময় যাতনার মধ্য দিয়ে পার করে এসেছে সময়। প্রিয়জন হারানো এই শোকের কোন সান্ত্বনা হয়না। ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে একেকটা পরিবারে, তা পূরনের কোনো সাধ্য নেই কারো। দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান যারা, যাদের বলিদানে অর্জিত হয়েছে আজকের এই গৌরবদীপ্ত জাতীয় পরিচয়, তাদের অনেকের সংসারই ভেসে গেছে। হালহীন- পালহীন নৌকার মতো তলিয়ে গেছে অনেক পরিবার। সে কথা ভেবে বড় কষ্ট হয়, গ্লানিবোধ হয! তারা চায়নি কিছুই, তাই বলে আমরা সবাই কি দায়মুক্ত?
জন্মান্ধ চোখে আমরা শুধু মানুষের জন্ম পরিচয়ের মাধ্যমে তার ভালো মন্দের হিসাব কষি। চিহ্নিত করি অনির্ধারিত অনির্বাচিত পরিচয়ের ছাঁচে। আমাদের স্বেচ্ছা নিস্পৃহতার সুযোগে প্রতিনিয়ত এই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। বিমূর্ত যাতনা উপন্যাসটি এমন প্রেক্ষাপটকে নিয়েই রচিত। সামাজিক আইনকানুন, ধর্মীয় পরিচয়, দেশীয় ঐতিহ্য আর মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে গল্প কখনও চলে গিয়েছে অনেকদূরের পথে আবার তা পরক্ষণেই ফিরে এসেছে পুরানো স্মৃতির শহরে নতুন পথের সন্ধান নিয়ে। মুহুর্তকে মানবিক চিন্তার সুতোয় আবদ্ধ করে এক অনন্য মালা গাঁথতে চেয়েছেন লেখিকা। তিনি কতটা স্বার্থক হয়েছেন তা তার পাঠকই বলতে পারবেন।
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া নানারকম ঘটনা খুবই শৈল্পিকভাবে গল্পে তুলে এনেছেন লেখক। তাঁর এই গল্পগ্রন্থে ছয়টি গল্প আছে। কোনও গল্পে শতবর্ষের কাছাকাছি বয়সের মা এবং ষাট অতিক্রম করা ছেলের কাহিনি, কোনও গল্পে বহু বহু বছর পর বড় ব্যবসায়ী ছেলের মনে পড়েছে কিশোর বয়সে বন্ধুর বাবার কাছে শোনা তার বাবার এক ঋণের কথা, কোনও গল্পে গ্রামের নির্জন কবরের পাশে পড়ে থাকা জ্যান্ত শিশু...‘ফেলে যাওয়া রুমালখানি’ জীবনের এই রকম ছয়টি দিকে নিয়ে যাবে পাঠককে।
‘সেই বিদেশিনী’, ‘প্রিয় লিলিয়ান’ ও ‘সেই বিদেশী মেয়ে’- তিন উপন্যাস নিয়ে ইমদাদুল হক মিলনের ‘লিলিয়ান উপাখ্যান’। মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুন স্বপন জীবন বদলের আশায় পাড়ি জমায় সুদূর জার্মানিতে। কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এগোয় সে। কিন্তু হঠাৎ জার্মান-কন্যা লিলিয়ানের আগমনে বদলে যেতে থাকে সবকিছু। ভালোবাসা, প্রেম দুই ভুবনের দুটি মানুষকে এক করে তোলে। একই সাথে সে সময়ে দুই দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার ব্যবধান, ভাবনা, বাস্তবতা, সম্পর্ক ইত্যাদির সাবলীল বর্ণনার খতিয়ান এই উপন্যাস।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘১৯৭১’। মুক্তিযুদ্ধের সময় নীলগঞ্জ নামে একটি গ্রামে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে উপজীব্য করে এটি রচিত। বাংলাদেশের হাজারো গ্রামের প্রতিনিধিত্ব করছে নীলগঞ্জ। তিনি এই গ্রামের পটভূমিতে একাত্তরের কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন এক ভাবনার উদ্রেক করে এই উপন্যাস।
‘একাকী একটি মেয়ে’ - আনিসুল হকের একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের উপর লিখিত উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র শিমু নামের একটি মেয়ে। গ্রাম থেকে ঢাকায় চাকুরীর ইন্টারভিয়্যূ দিতে এসে তার জীবন চিত্রে অংকিত হয় একটি নতুন চিত্রপট। যা তার জীবনকে নতুনে এক সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয়। যেই সংগ্রামে সে একা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সমসাময়িক মানুষের গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে আনিসুল হকের উপন্যাস ‘এখানে থেমো না’ । বইটিতে ১৯৬৯-৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত একটি ছবি তৈরি করা হয়েছে। ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে রচিত হলেও এটি কোনো ইতিহাসের বই নয়, উপন্যাস। লেখক ইতিহাস ও সাহিত্যের অপরূপ মিশ্রণ ঘটিয়েছেন এই উপন্যাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটগাছে বসবাস করা ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমির কথোপকথনে উপন্যাসটি প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠেছে। আর উপন্যাসের গল্পে ছড়িয়ে আছে অনেক অজানা তথ্য। এই উপন্যাসে এমন কিছু গল্প আছে যা হৃদয়ে কড়া নাড়ে। ইতিহাসকে কিভাবে মানুষের কাছে সুন্দর উপায়ে উপস্থাপন করা যায়, সহজ ও লাবণ্যময় ভাষায় বর্ণনা করা যায় এই উপন্যাসে লেখক সেটি দেখিয়েছেন।
‘স্মৃতির জ্যোতির্ময় আলোয় যাঁদের দেখেছি’ একটি স্মৃতিচারণমূলক বই। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এবং এই সময়ের বাঙালি লেখকদের মধ্যে আলোকিত ও আলোচিত লেখক রাবেয়া খাতুন তাঁর এই বইটিতে রোমন্থন করেছেন জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কয়েকজন গুণী মানুষের সানিধ্যে আসার অভিজ্ঞতা, স্মরণ করেছেন সাহিত্য অঙ্গনের নানা ঘটনা যা তাঁকে প্রভাবিত করেছে ব্যাপকভাবে। প্রথিতযশা এই লেখিকা উল্লেখ করেছেন কবি সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, খান আতাউর রহমানসহ আরো অনেকের স্মৃতি।
আমি আর এলিটা দাঁড়িয়ে আছি ব্যালকনিতে। জমে যাওয়া ঠাণ্ডায় ঘুমিয়ে গেছে পুরো পারো। নিস্তব্ধ পৃথিবী। এলিটার নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট। শব্দের সাথে অনুমান করা যায় তার নাকের কাছটা তিরতির করে কেঁপে উঠছে। শরীরে পুলওভার চাপিয়েছি। কে জানতো ফের এই বেজক্যাম্পেই এসে ঠেকবো, কে জানতো আবার আমাদের দু’জনকে প্রকৃতি এই বারান্দায় এনে ফেলবে, ঠিক এমনই নিশিরাতে। ঠিক যেন সেই রাত ফিরে এসেছে, যেখান থেকে ভালো মন্দের শুরু। যেখান থেকে টর্নেডো শুরু হয়ে পরিণত হলো শান্ত সমুদ্রে। আজকের সাথে সেদিনের পার্থক্য এক জায়গায়। সে রাতে চাঁদ ছিল না। আজকের ঘুমন্ত পারোর আকাশে এক থালা নিঃসঙ্গ চাঁদ রয়েছে। পারোর শীত, কুয়াশার চাদর জোছনাকে মলিন করতে পারেনি বটে। ফিনকি দিয়ে ঝরছে চাঁদের আলো। এলিটার মুখ যেন গ্রামের মেলা থেকে কেনা এক টুকরো ঝকঝকে আয়না, আলো প্রতিফলিত হয়ে চাঁদকেই ফিরিয়ে দিচ্ছে।
আমেরিকার কুখ্যাত জেল গুয়ানতানামো বে থেকে বিনা বিচারে ১২ বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছে এক বাংলাদেশি। ওয়াশিংটন পোস্টের এই খবরে চমকে গেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে এমন সন্ত্রাসীর দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। আমেরিকান আর্মির কার্গো প্লেন তাকে ফেলে গেছে আলবেনিয়ার তিরানা বিমান বন্দরে। ট্রাভেল ডকুমেন্টহীন দেশহীন মানুষটাকে পৃথিবীর কোনো দেশ রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় না। রিফিউজির স্ট্যাটাস নিয়ে তাকে থাকতে হবে রেডক্রসের শেল্টারে। মানুষটা এখন কোথায় যাবে? চেনা সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, একটা অচেনা দরজা খুলে যায়, জীবন বন্দি হয়ে গেলে সেটা জীবনকেও ছাপিয়ে যায়, সেই জীবনের গল্প জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায়... The Fiction Based on Fact; এই উপন্যাসের স্থান সত্য, কাল সত্য, ইতিহাস সত্য, কাল্পনিক শুধু এর চরিত্রগুলো।
বয়ঃসন্ধিকালের আবেগ থেকে জন্ম প্রেমের উপন্যাস ‘লাল কাতানের দুঃখ’-এর। গ্রাম্য স্কুল মাস্টারের ছেলে মজনুর প্রেমে পড়ে উচ্চবিত্ত ধনীর দুলালী রাত্রি। স্কুলজীবনে ঢাকায় পদার্পণ মজনুর। পড়াশুনার পাশাপাশি ফুচকার দোকানে চাকরি করে। দেখা হয় রাত্রির সাথে। একদিন মজনু রাত্রিদের বাসায় দেখা করতে যায়। একটি লাল কাতান নিয়ে বের হওয়ার সময় ধরা পড়ে রাত্রির বাবা মা’র কাছে। মজনুকে ভুল বুঝে রাত্রিকে তার বাবা রাজশাহীর একটি স্কুলে ভর্তি করে দেন। শুরু হয় রাজশাহীর বখাটে ছেলে সনেটের সাথে রাত্রির সম্পর্ক। পতিতালয়ে রাতযাপনে অভ্যস্থ সনেটের দ্বারা রাত্রি কি ধর্ষিতা হয়? সমাজের বাধা ডিঙিয়ে প্রেমের টানে মজনু ও রাত্রির সারাজীবন একসঙ্গে থাকার স্বপ্নের কী হবে তাহলে?