Product Summery
শুধু একটা খুন নয়- ধ্বংস হয়ে গেছে পুরো একটা বিশ্ব । সাধারণ কোনো গোয়েন্দা নয়, তদন্তে নেমেছে স্বয়ং সে বিশ্বের স্রষ্টা, দেবতা কেটজালকোয়াটল। সে জানে না এ তদন্ত তাকে নিয়ে যাবে অজানা ভুবনে, দাঁড় করাবে অকল্পনীয় বিপদের মুখোমুখি, দিতে বাধ্য করবে অসম্ভব সব পরীক্ষা । ধীরে ধীরে উন্মোচিত হবে দেবতা, দানব, জাদু আর মৃত্যুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা ষড়যন্ত্রের জাল। তানজীম রহমানের মিথোলজিক্যাল মিস্ট্রি ‘কেটজালকোয়াটল ও সৃষ্টিবিনাশ রহস্য’ শুধু থ্রিলারপ্রেমীদেরই নয়, কিংবদন্তি আর ফ্যান্টাসিপ্রেমীদেরও সমানভাবে আকর্ষণ করবে।
জাপানিজ বইগুলোর অনুবাদ পড়ার পরে অনুভূতি এমন হয় যে, কাহিনি না যতটুকু প্যাঁচ খাওয়ায় তার চেয়েও ক্যারেক্টার নাম মনে রাখতে পাঠকের মেহনত করতে হয় তার চেয়েও বেশি। দেশিয় দিক থেকে ❛কেটজালকোয়াটল ও সৃষ্টিবিনাশ রহস্য❜ নভেলাটি চরিত্রের নামের দিক থেকে এই প্যাঁচকে একটু ওপরের দিকে ধাবিত করেছে। না কাহিনি প্যাঁচানো না, নাম এই এক আধটু কঠিন-ই বটে। যা-ই হোক, ইউনিক করতে গিয়ে কিছুটা কাটখোট্টা বানিয়ে ফেলেছে। প্রথমত এই নভেলাতে কোনো মানুষের ছিঁটেফোঁটা নেই! যেহেতু লেখক মিথলজিক্যাল ফ্যান্টাসি লেখতে চেয়েছেন সেদিক থেকে তিনি ভেবে নিয়েছেন পুরোপুরি সভ্যতা ও মিথ কেন্দ্রিক সৃষ্টি করবেন। করলেনও তাই। নভেলাতে হুড়মুড় করে ঢুকেছে অ্যাজটেক থেকে শুরু করে অলিম্পিয়াস, টাইনটান, নর্স ও জাপানিজ মিথ। পাঠক একটু অবাক হতে চাইবেন! কীভাবে এই পিচ্চি উপন্যাসিকাতে লেখক এতকিছুর যোগসূত্র ঘটালেন? বেশি ভাবতে হবে না, কাহিনি খুবই সিম্পল। অ্যাজটেক সভ্যতা কেন্দ্র করে তৈরি করেছেন দেবতাদের যুবরাজ কেটজালকোয়াটলকে। যে সৃষ্টি করেছিল পৃথিবী। কিন্তু কালক্রমে সে পৃথিবী ধূলিসাৎ করে দেয় কোনো এক দেবতা বা দানব! কেটজালকোয়াটলের কাজ সে-ই দেবতা বা দানব তাকে খুঁজে বের করা। অনেকটা অ্যাডভেঞ্চারের ফিল আসে তবে সেটা খুব সামান্য৷ এক্সুয়েলি নাম উচ্চারণ করতে করতে কাহিনি অর্ধেক পিছিয়ে যাচ্ছিল। এখন মানুষ বলবে, আমি নাম পড়তে পারি না! যারা পড়েননি তাদের একটি জিনিস বলে রাখি, কেটজালকোয়াটল তৈরি করেছে অ্যাজটেক সভ্যতার দেবতার পুত্ররূপে। তাই লেখক তাদের টাইটেল দিয়েছেন ❛জালকোয়াটল❜। নামের অংশ মনে রেখে পড়ে যাবেন, তাহলে আর বেশি হ্যাপা পোহাতে হবে না। নভেলা হওয়াতে লেখক কোনো সাবপ্লটের জন্ম দিতে চাননি, তাই ব্যাকস্টোরি বা ফ্ল্যাশব্যাক থাকবে এই চিন্তা মাথায় না রেখে পড়া শুরু করবেন। গল্প শুরু হয় অ্যাজটেক সভ্যতার দেবতা পুত্র কেটজালকোয়াটলের পিতা-মাতা অর্থাৎ দেবতাদের প্রধান রাজা-রানির সাথে কথপোকথনের মধ্যে দিয়ে। কেটজালকোয়াটল এসে তাদের জানায় যে, তার সৃষ্টি করা পৃথিবী যেখানে মানুষ থাকে; সেটা কেউ ধ্বংস করে দিয়েছে। এইবার সে-ই কেউ কে সেটা খোঁজার জন্য কেটজালকোয়াটল অনুসন্ধানে বের হয়। নামের কারণে প্রথমে একটু ধীরগতির হতে হয়েছিল। কারণ নাম আর তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানাশোনা প্রয়োজনীয়। মূল কাহিনি শুরু হলেও ঢুকতে কিছুটা সময় ব্যয় হয়েছে। গল্প বুননে লেখকের যে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে সেটা অল্পতে আন্দাজ করা গেছে। গল্পের ভিত্তি গড়ে তুলতে বেশি বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়োজন পড়েনি। দ্রুত প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে যতটুকু বিল্ডাপ দিয়েছে ভালোই। লেখনশৈলী বেশ ঝরঝরে। আরাম করে পড়া গিয়েছে। নামের জায়গা বাদ দিলে বাদবাকি সবকিছু দারুণভাবে টপকে গেছে। শব্দচয়নে বিশেষ দক্ষতা লক্ষ করা গিয়েছে। ফ্যান্টাসি নির্ভর যেসব শব্দের দরকার ছিল সেগুলো সাবলীলভাবে বাক্য ঢুকিয়ে মুখরোচক করে দিয়েছে। কোনো ঘটনার বর্ণনা হচ্ছে ফ্যান্টাসি উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। শব্দ ও বাক্যের মেলবন্ধনে যখন কোনো ঘটনার পারফেক্ট বর্ণনা দেওয়া হয় তখন পাঠক পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেয়ে থাকে৷ লেখক এইখানে কোনো ছাড় দেননি। প্রথমত এই উপন্যাস দেব-দেবীদের ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। তাই তাদের দৈহিক বর্ণনা ও কাজের ব্যবচ্ছেদ করতে হলে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনেক কিছু লক্ষ রাখা উচিত। অন্যদিকে দেব-দেবীর সাথে কিছু ক্রিয়েচারও রয়েছে। তাদের দৈহিক বর্ণনা থেকে কাজের ধরন সবকিছু সবিস্তারে আলোচনা উঠে এসেছে। প্রচলিত দিক থেকে গ্রিক মিথের হেডিস, পার্সিফোনি, ক্রোনাসের ঝলক অল্পতে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। দুটো মৃত্যুপুরীর বর্ণনা সে-ই সাথে সেখানে অধিষ্ঠিত সবকিছুর যথোপযুক্ত ব্যাখা দাঁড় করিয়েছে। লেখক ক্ষান্ত দেননি। নিয়ে গিয়েছেন নর্স মিথে। যেখানে দেবতা ওডিন-থর-লোকি নিয়ে গল্প তৈরি করেছেন। ভালাহালার বর্ণনা ও সেখানে অধিষ্ঠিত নয় রাজ্যের স্থাপনা কীভাবে হয়েছে সেটাও উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ পুরোপুরি মিথলজিক্যাল ফ্যান্টাসি তৈরি করতে সবরকম মিথের মিশাল করেছে। কয়েকটি যুদ্ধের বর্ণনাও অল্পতে সুন্দর করে বর্ণনা করেছে। সবমিলিয়ে বর্ণনাভঙ্গির জায়গাতে লেখল নিজের মুনশিয়ানার প্রমাণ দিয়েছেন। যেহেতু প্রধান চরিত্রে কেটজালকোয়াটল ছিল; যে কি-না শুকতারা, আলো, দয়া, বাতাস, বুদ্ধি, ন্যায়ের ও ভোরের তারার দেবতা। এইরকম আরও বিভিন্ন দেব-দেবীর ক্ষমতা সম্পর্কে অল্পবিস্তর বাক্যালাপ করেছেন। তাদের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করে চরিত্রায়নে কোনো কমতি প্রস্ফুটন করতে দেননি। ওডিন-থর-লোকি থেকে হেডিস-পার্সিফোনি-ক্রোনাসের মতো হাই ভোল্টেজ মিথলজিক্যাল ক্যারেক্টারের সাথে কেটজালকোয়াটল মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা নজরকাড়া ছিল। যে চরিত্র যেভাবে ঠিক সেইভাবে ব্যবহারের উপযোগী করেছেন। তবে হেডিস-পার্সিফোনির সম্পর্ক একটু অন্যরকম লাগল। ওদিকে থরের বর্ণনায় প্রথমে ভেবেছিলাম সে কোনো ক্রিয়েচার! এই দুদিক ছাড়া বাকি সবকিছু ঠিকঠাক। সমাপ্তি আহামরি না। টুইস্ট ছিল তব আন্দাজ করা যাচ্ছিল। কারণ কী সেটা পাঠক পড়লে বুঝবেন। টুইস্ট অতটা নজর না কাড়লেও গল্প আমাকে আকৃষ্ট করেছে। হয়তো আমার মিথলজি মাত্রাতিরিক্ত ভালো লাগে তাই। তবে লেখকের বিচক্ষণতার জন্য আমি সাধুবাদ জানাই৷ এইরকম ভাবে মিথের মিশেলে সহজবোধ্য গল্প খুব কম লেখতে পারে। সমাপ্তির কারণ এবং কেটজালকোয়াটলের ফাইন্ড আউট করতে পারে প্রধান কালপ্রিট কে সেগুলোও ভালো ছিল। এই গল্প টেনে ট্রিলজি থেকে সিরিজও বানিয়ে ফেলা যাবে যদি সাবপ্লট আর ব্যাকস্টোরি নিয়ে আসে৷ শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়ে আবার শূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার মতো উপন্যাসিকা। যারা মিথলজি পছন্দ করেন তাদের একবার হলেও পড়ে দেখা দরকার।
Peal Roy Partha 2022-02-02 11:35:43