আলী ইমাম বাংলাদেশী শিশু-কিশোর সাহিত্যে একটি পরিচিত নাম। তার স্বকীয়তার কারণে যিনি স্থান করে নিয়েছেন শিশু-কিশোর সাহিত্যের পাঠকদের হৃদয়ে। তার রচিত ‘মউলতার তিলাকি’ মূলত কিশোর রহস্য ডকু উপন্যাস। এগারোটি অধ্যায় বিভাজনে তিনি এই উপন্যাসের গল্প উপস্থাপন করেছেন। যেখানে কল্পিত একটি এলাকা ও বিভিন্ন চরিত্রের সাথে পরিচিত করে দেয় পাঠককে।
‘১টি প্রায় ভৌতিক বই’ আসলে পুরোপুরি ভূতের বই হয়ে উঠতে পারেনি বলেই ‘প্রায়’ ভূতের বই। এতে অবশ্য রম্য গল্পও কিছু আছে যেমনটা লেখক আহসান হাবীব লিখে থাকেন। আছে বিজ্ঞান রম্য স্মৃতিকথা আর একবারে পেশাগত নিজস্ব কিছু লেখালেখি। সব মিলিয়েই এই প্রায় ভৌতিক আয়োজন। তবে শুনে নেয়া যাক চমৎকার প্রায় ভৌতিক গল্পগুলো...
যোগদিয়ার কাছে বাঁক নেওয়া মেঘনা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল বিভীষিকাময় বলে পরিচিত। এই অঞ্চলটা পাড়ি দেবার সময় বণিকদের নৌবহরে হিমশীতল নীরবতা বিরাজ করে। গল্পে উঠে এসেছে ঐ স্থান অতিক্রম করার সময় নৌযান যাত্রীদের অজানা আশঙ্কার কথা! যেন তারা মৃত্যু পথযাত্রী। এই নামটির ভেতরে যে ভয়ংকর বিভীষিকা রয়েছে তা জেনে নেওয়া যাক শেষ পর্যন্ত!
অগ্রজ হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লিখেছেন অনুজ আহসান হাবীব । ছেলেবেলার স্মরণীয় স্মৃতি, আনন্দ-দু:খ জড়িয়ে রয়েছে ‘স্মৃতির পাতায়’ গল্পে। বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদের দেওয়া জন্মদিনের উপহার ও তাঁর কবিতা - ছবি , লেখক আহমেদ ছফা’র দেওয়া ঘড়ি উপহার, মেঝ ভাই জাফর ইকবাল ও তার বোন মমতাজ আহমেদ শিখুর স্মৃতিকথায় কিছুক্ষনের জন্যে ডুবে যাবেন পাঠক শ্রোতারা
মধুমিতা চক্রবর্ত্তী তাঁর ‘একাকী’ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন এক নারীর গল্প। যে গল্পে তিনি মানবিক সম্পর্কের শিকড় আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চান। বেঁচে থাকতে চান নিজের জন্য যতটা না, তার চেয়ে অনেক বেশি অন্যের জন্য, কাছের মানুষগুলোর জন্যে। বেঁচে থাকতে চান একান্ত নিজের মতো করে। প্রত্যেক মানুষই তার নিজস্ব উপলব্ধির ভার একাকী বহন করে। এক্ষেত্রে সমাজ-সংসার তেমনভাবে কারও পাশে দাঁড়ায়না। নিবিড় সম্পর্কের অমোঘ টানে হয়তোবা ব্যর্থ হয়ে যায় কারও জীবনের স্বাভাবিক আয়োজন। একজনের হৃদয়ের ভাষা অন্যজনের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠে। মানুষ তার আত্মোপলব্ধির দায় বহন করতে গিয়ে হয়ে পড়ে আরও নিঃসঙ্গ, আরো একাকী।
আজ মঙ্গলবার। দুই বন্ধু রনি আর আরিফ মানুষের মঙ্গলজনক কোনো কাজ করার জন্য স্কুল পালিয়েছে। একটা পুঁটলি কিছুক্ষণের জন্য রাখতে বলে একজন লোক ঝোপের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের ড্রেস পরা তিনজন লোক তাদের সামনে এসে হাজির হয়। দুই বন্ধু আঁতকে উঠে! মুহূর্তে ঐ পুলিশ তিনজনও ঝোপের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যায়। ঝোপের এমন কি রহস্য? যা জ্যান্ত মানুষ গিলে ফেলে!
মঙপো ও কুনাল বাউরি প্রেতসাধক দু’জনই হিংস্র প্রকৃতির লোক। তারা মউলতার ধনপতি বণিকের বাড়ি আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে। ধনপতি বণিক মউলতার তাঁতিপাড়া থেকে উৎকৃষ্ট মসলিনের বস্ত্র সংগ্রহ করে তন্ত্রশক্তি দিয়ে তার বাড়িকে সুরক্ষিত রাখে। আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করতে সক্ষম কিশোর তিলাকি এখন বণিকের সাথে যাত্রা করবে না কি প্রেতসাধকদের ডাকে সাড়া দিবে?
হুমায়ূন আহমেদের অমর সৃষ্টি মিসির আলী, এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তার সাথে দেখা করতে আসেন ওসমান গণি নামের একজন লোক, যার তিনটি দাঁত সোনা দিয়ে বাঁধানো। কিছু কথাবার্তার পর ওসমান গণি এক অদ্ভুত আবদার করেন মিসির আলীর কাছে। এর পরের দিন মিসির আলীর বাসায় পুলিশ আসে। কেননা ওসমান গণি মারা গেছেন। এটা কি আত্মহত্যা? নাকি খুন? রহস্য উদ্ধারে মাঠে নামেন মিসির আলী!
হাড়কাঁপানো শীত বোঝার ভিন্ন ধরনের গল্প ‘কনকনে শীত’। শীতের মৌসুমে সাধারণত ধরা খায় পকেটমাররাই। কারণ ঠাণ্ডার কারণে তাদের বাঙালি ক্লায়েন্টরা প্যান্টের দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে চলাচল করে। পাশের দেশ থেকে আগত জনৈক সেলিব্রেটি পকেটমার ঢাকা’র এক পকেটমারের পকেটে নকল টাকা দেখে একটি চিরকুট রেখে দিয়ে যায়। চিরকুট পড়ে বিস্মিত গুলিস্তানের পকেটমার!
মসলিন কাপড় তৈরির জন্য মউলতা গ্রামের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। মিহিন সুতোর এই গ্রাম মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। পাইনামের হাটে এই বস্ত্রের খুব চাহিদা। বিদেশি বণিকদেরও প্রথম পছন্দ। তারা কুশলি তাঁতিদের প্রশংসা করে। পালতোলা জাহাজে করে পৌঁছানো এই মসলিন দেখে ভিন দেশের লোকেরা বিস্মিত হয়! তাদের ধারণা, হয়তো বা পরিরা সোহাগ করে তৈরি করেছে এত সূক্ষ্ম বস্ত্র! মানুষের পক্ষে কি সম্ভব?
জেফ্রির বয়স কত হবে? টুতে পড়ে। সে এখনই গল্প লেখে। জেফ্রির মা মেরিনা ভেবেছিলেন, মেয়ে বোধ হয় ডায়েরি লেখে। একদিন মেরিনা খাতা খুলে গল্পগুলো পড়লেন। লেখাগুলোকে ঠিক গল্প বলা যায় না, ডায়রির মতো করেই লেখা, পড়ে চমকে যান তিনি, একটা অজানা ভয় গ্রাস করে তাকে। অদ্ভুত গল্পের চরিত্রগুলোর নাম - অনুফ্রিক, খ্রেগসা আর মেত্রিফি। এরা কারা? আর জেফ্রির সাথেই বা কীভাবে এদের পরিচয়?
হেলাল হাফিজের ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ গ্রন্থটিতে রাজনীতির পাশাপাশি স্থান পেয়েছে পরিশুদ্ধ প্রেম, চিরায়ত নারী, ব্যক্তিগত হতাশা, স্বপ্নকাতুরতা, গ্রামীণ ও নগর জীবনের স্বপ্ন ভঙ্গ ও স্বপ্ন ফিরিয়ে আনার আহ্বান। ফাগুনের আগুন শিখার মতোই কবিতাগুলোতে কবিকে পাওয়া যায়। একই সাথে দেখা যায়, রাজপথের স্লোগানে- যুবক, বিদ্রোহী, কষ্টের ফেরিওয়ালা কিংবা কোনো কিশোরীর প্রেমিক রূপে।
মকবুল চাচা একদিন দুজন লোককে তার বাড়ির চারিপাশ ফিতা দিয়ে মাপঝোক করতে দেখেন। তিনি তখন তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেন। তারা আবার ফিরে আসে, বিরক্ত মকবুল চাচা তাদের বিষ মেশানো চা দেন, চা পান করে তারা প্রাণ হারায় এবং তিনি নিজেই বাড়ির পেছনে গর্ত খুঁড়ে দুজনকে একসাথেই মাটিচাপা দেন। বেশ কিছুদিন পর ঐ দুজন লোককে আবার ফিতা দিয়ে তার বাড়ি মাপতে দেখে মকবুল চাচা ভয়ে আঁতকে উঠেন! তারপর ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা!
তেঁতুল গাছে ভূত-পেত্নি থাকতেই পারে! এ আর এমন কী? চলার পথের পাশে ঝাঁকড়া তেঁতুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মান্নান দেখলো, এ কী! গাছের ওপর একটি বাচ্চা ছেলে বসে আছে! এর মধ্যে বয়ে যাওয়া শীতল বাতাস টের পেলেন মান্নান। নিচে নামতে থাকা বাচ্চাটিকে দেখে মান্নান আঁতকে ওঠেন, এ যে বাচ্চা নয়! প্রচণ্ড ভয়ে ওই রাতে মান্নানের গায়ে জ্বর আসে। এরপর? অদ্ভুত ঘটনার তখনো বাকি...
ভরদুপুরে সাদা চুলের ভূত দেখে সুফি আঁতকে উঠে! মা রাহেলা বেগম চিন্তিত বোধ করেন। ভাবতে থাকেন এতো চিকন ডালে ভূত বসে থাকবে কেমন করে? সুফির বাবা জানেন, এ বয়সে বাচ্চারা কল্পনার জগতে থাকে। নানা রকম গল্প বানায়! কিন্তু হঠাৎ একদিন রাহেলা বেগম দেখতে পেলেন, কামিনী গাছের ডালে সাদা কাপড় পরা অদ্ভুত এক রোগা মহিলা বসে আছে! তাহলে রাহেলা বেগম সত্যি ভূত দেখেছে না কি কল্পনা?
মীরা ভূতকে ভীষণ ভয় পায়। তার আবার রাত জেগে হরর মুভি দেখার অভ্যাস! ছোট ভাই বাবলু পরিকল্পনা করে রাত আড়াইটার সময় মীরাকে ভূতের ভয় দেখাবে। ভূতের মাস্ক আর একটা আলখাল্লা পরে মীরাকে ভয় দেখানোর জন্য বাবলু প্রস্তুত। কিন্তু তার মধ্যেই বাবলু বুঝতে পারে বাসায় তৃতীয় কারো উপস্থিতি। মীরা যখন ঠান্ডা পানি পানের উদ্দেশ্যে ফ্রিজের দিকে যায়, ঠিক তখনই তার আড়াল থেকে হঠাৎ কে যেন সরে পড়ে। তারপর?
হৈমন্তী গল্পে উঠে এসেছে মানুষের সম্পর্কজালের মধ্যে বহমান জটিল রূপ। কেন্দ্রীয় চরিত্র হৈমন্তী’কে ঘিরে রয়েছে তৎকালীন হিন্দু সমাজের চিত্র। হৈমন্তী’র প্রতি ছিলো স্বামী চরিত্র অপু’র অগাধ ভালোবাসা! অপু’র বাবার ধারণা হৈমন্তীর বাবা বড় চাকরি করেন। রাজার মন্ত্রী তিনি। তার প্রচুর টাকা-পয়সা ব্যাংকে জমা রয়েছে। সুতরাং পণের টাকা যা পেয়েছেন, ভবিষ্যতে আরো পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যখন জানতে পারেন যে, হৈমন্তী’র বাবা একজন সাধারণ স্কুল মাস্টার! তখন থেকে শ্বশুর বাড়িতে নেমে আসে হৈমন্তী’র জন্য নরকবাস! নিষ্ককলঙ্ক নারী হৈমন্তী ঘুনে ধরা সমাজে যৌতুকের কষাঘাতে নির্যাতনের শিকার!
পোস্টমাস্টার, রতন ও প্রকৃতি এই গল্পের মূল চরিত্র। জলের মাছকে ডাঙায় তুললে যেরকম হয়, গণ্ডগ্রামের মধ্যে এসে পোস্টমাস্টারেরও সেই দশা উপস্থিত হয়েছে। অন্ধকার একটা আটচালার মধ্যে তার দপ্তর। অতি সামান্য বেতনের সাধারণ একজন পোস্টমাস্টারের প্রেমে পড়ে গ্রাম্য বালিকা রতন। প্রধান দুটি চরিত্রের আবেগ নিয়ন্ত্রণে প্রকৃতি বিশেষ অবদান রাখে। প্রেম বিচ্ছেদে পোস্টমাস্টারের প্রেমিকা উন্মাদ প্রায় হয়ে গেলেও পোস্টমাস্টার বাস্তবের মুখোমুখি হয়। অজপাড়াগাঁ ছেড়ে কলকাতা শহর যেতে তার মন ব্যাকুল হয়। সমাজকে অস্বীকার করে শুধু প্রেমের টানে এই দুই মানব-মানবীর সারা জীবন এক সঙ্গে থাকার স্বপ্ন কি হবে তাহলে?
পূর্ববাংলায় এক মহকুমা শহরে নিখিলের বাবা একজন নামকরা হাকিম। তালুকদার শশাঙ্ক চক্রবর্তীর ছেলে অজিতের সাথে খুব ভাব হয় নিখিলে। তারা একই ক্লাসে পড়ে। অজিতদের গ্রামের বাড়িতে প্রতি বছর খুব সমারোহের সঙ্গে পূজা হয়। এ বছর নিখিলকে অজিত নিমন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের রোগে ভরা গাঁয়ের চারদিকে জল কাদা। থাকার ব্যবস্থাও নোংরা। তাতে লোক গিজগিজ করবে পূজো উপলক্ষে! একারণে নিকিলের বাবা-মা প্রথমে তাকে সেখানে যেতে বাধা দিলেও শেষ পর্যন্ত অনুমতি দেয়। অজিতদের বাড়ি পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যা হয়। নিখিলের খুব ক্ষিধে পায়। কিন্তু প্রতিমা বিসর্জনের পূর্বে খাওয়া যাবে কি? নিখিল কয়েক গ্লাস সিদ্ধির সরবত খেয়ে নেয়। নিখিল জীবনে এই প্রথম সিদ্ধি খেয়ে আবোল তাবোল বলা শুরু করে। নিখিল কি তাহলে পাগল হয়ে গেলো?
ভূত দেখে নীলা চিৎকার করলেও কোনো শব্দ বের হলো না। বরং কানের কাছে হঠাৎ বিকট একটা আওয়াজ উঠায় আঁতকে উঠে সে মূর্ছা যায়। প্রফুল্ল বাবুও একরাতে দেয়ালে ছায়া মূর্তি দেখেন। ছায়া মিলিয়ে যাওয়ার পর তিনিও গলা ফাটিয়ে আর্তনাদ করেন। কিন্তু কোনো আওয়াজ হলো না। ভূতের রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রফুল্ল বাবু তার মেয়েকে নিয়ে রাত জেগে বসে থাকে। হঠাৎ ঘরের মধ্যে একটা অদ্ভুত অস্পষ্ট গড়গড় চাপা আওয়াজ শুনতে পায়। সেই সঙ্গে দেয়ালে দেখা যায় চারটি পোড়া ছায়া! ছায়াগুলো আচমকা হাত ঘড়িটাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র তুলে নিয়ে যায়। তারা সকলে ভয়ে চিৎকার করে। এই ছায়া রহস্য ও অদ্ভুত আরো ভৌতিক ঘটনা জানতে শেষপর্যন্ত বইয়ের সঙ্গে থাকা যাক।
বেশ ক’বছর খালি পড়ে থাকা হরিশবাবুর বাড়ির দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। জানালাও বন্ধ। হঠাৎ করে হরিশবাবু তার পরিবারসহ কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। বাড়ির আঙিনা আগাছায় ভরে গেছে। হরিশবাবু একটা ঠিকানা দিয়ে গিয়েছিল বিমানের বাবাকে। কিন্তু অনেক চিঠি দেওয়ার পরও কোনো উত্তর আসেনি। হঠাৎ এক রাতে বিমান শুনতে পায় হরিশবাবু বাড়ি এসেছে। তার বাড়িটি আজও বাইরে থেকে তালা দেওয়া। বিমান খুশি হয়ে তার বাল্য বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে ঘরের ভিতর থেকে একটা চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। এমন সময় হঠাৎ গোরা এসে বিমানের হাত ধরে। তার হাতটা কেমন যেন শীতল। বিমান ভয়ে কেঁপে উঠে! দরজা না খুলে সে এলোই বা কি করে? সে কি ভূত না কি! হরিশবাবুর চেহারাটাও রহস্যময়! বিমান বাড়ি ফিরলে তার প্রচণ্ড জ্বর হয়!